Noun কাকে বলে? প্রকারভেদ ও উদাহরণসহ ব্যাখ্যা
বিশেষ্য (Noun) : নামই যখন পরিচয়! প্রকারভেদ আর উদাহরণে সহজপাঠ
আচ্ছা, ভাবুন তো, চারপাশে যা কিছু দেখছেন – মানুষ, পাখি, টেবিল, নদী, আকাশ, হাসি, কান্না – এদের যদি কোনো নাম না থাকত, তাহলে কেমন হতো? এদের চিনতাম কী করে, ডাকতামই বা কী দিয়ে? একটু কঠিন হয়ে যেত, তাই না? এই নামগুলোই তো বিশেষ্য বা Noun। ব্যাকরণের ভাষায়, কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, গুণ, অবস্থা বা কাজের নামকে বিশেষ্য বলে।
বিশেষ্য ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের চারপাশের জগতকে বুঝতে এবং প্রকাশ করতে সাহায্য করে। চলুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা বিশেষ্য (Noun) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি – এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং উদাহরণসহ।
Noun কাকে বলে? (Definition of Noun)
সহজ ভাষায়, বিশেষ্য মানে নাম। যে শব্দ দিয়ে কোনো কিছুর নাম বোঝানো হয়, তাকেই বিশেষ্য পদ বলা হয়। এই ‘কিছু’র মধ্যে সবকিছুই পড়তে পারে – মানুষ, জীবজন্তু, জিনিসপত্র, জায়গা, অনুভূতি, গুণাগুণ, এমনকি কোনো কাজের নামও।
যেমন:
- মানুষ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাকিব আল হাসান, মা, বাবা, শিক্ষক।
- বস্তু: বই, খাতা, কলম, টেবিল, চেয়ার, মোবাইল।
- স্থান: ঢাকা, লন্ডন, সুন্দরবন, পাহাড়, সমুদ্র।
- গুণ: সততা, দয়া, সাহস, বুদ্ধি, তারুণ্য।
- অবস্থা: শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, বার্ধক্য, অসুস্থতা।
- কাজ: খেলা, ঘুম, দৌড়, লেখা, পড়া।
বিশেষ্যের প্রকারভেদ (Types of Noun)
বিশেষ্য প্রধানত ছয় প্রকার:
- নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun)
- জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun)
- বস্তুবাচক বিশেষ্য (Material Noun)
- সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun)
- গুণবাচক বা ভাববাচক বিশেষ্য (Abstract Noun)
- ক্রিয়া বা অবস্থাবাচক বিশেষ্য (Verbal Noun)
নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun)
যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু, স্থান বা ধারণা বোঝানো হয়, তাকে নামবাচক বিশেষ্য বলে। এটি সবসময় একটি নির্দিষ্ট সত্তাকে চিহ্নিত করে।
যেমন:
- ব্যক্তি: কাজী নজরুল ইসলাম, মাদার তেরেসা, বিরাট কোহলি।
- স্থান: বাংলাদেশ, কলকাতা, প্যারিস, কুতুব মিনার, তাজমহল।
- নদী: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, টেমস, নীলনদ।
- মাস ও দিন: বৈশাখ, শ্রাবণ, শুক্রবার, রবিবার।
- গ্রন্থ: গীতাঞ্জলি, কুরআন শরীফ, বাইবেল, মহাভারত।
নামবাচক বিশেষ্যের প্রথম অক্ষর সবসময় বড় হাতের (Capital Letter) হয়।
জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun)
যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো একটি জাতির বা শ্রেণির সব সদস্যকে বোঝানো হয়, তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে না বুঝিয়ে পুরো জাতিকে বোঝায়।
যেমন:
- মানুষ: ছেলে, মেয়ে, শিক্ষক, ডাক্তার, খেলোয়াড়, জনতা।
- প্রাণী: গরু, ছাগল, পাখি, মাছ, হাতি, বাঘ।
- বস্তু: বই, খাতা, কলম, টেবিল, চেয়ার, মোবাইল।
- ফল: আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা।
- নদী: নদী, খাল, বিল, পুকুর।
জাতিবাচক বিশেষ্য একটি শ্রেণির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে তুলে ধরে। “ছাত্র” বললে আমরা সকল ছাত্রকেই বুঝি, কোনো নির্দিষ্ট ছাত্রকে নয়।
বস্তুবাচক বিশেষ্য (Material Noun)
যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো বস্তু বা পদার্থের নাম বোঝানো হয়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। এই ধরনের বিশেষ্য সাধারণত গণনা করা যায় না, শুধু পরিমাণ করা যায়।
যেমন:
- ধাতু: সোনা, রুপা, তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম।
- খাদ্য: চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, দুধ, পানি।
- প্রাকৃতিক উপাদান: মাটি, পাথর, বালি, কয়লা, গ্যাস।

বস্তুবাচক বিশেষ্যগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা জিনিসপত্র এবং উপাদানগুলোকে নির্দেশ করে।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun)
যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টিকে বোঝানো হয়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। এটি একটি দল বা সংঘকে নির্দেশ করে।
যেমন:
- দল: দল, বাহিনী, ঝাঁক, বহর, পাল, পরিবার, পঞ্চায়েত
- সংস্থা: সমিতি, সংঘ, ক্লাব, কোম্পানি, সেনাদল।
- শ্রেণী: শ্রেণি, দল, গোষ্ঠী, জাতি।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য একটি গ্রুপের সামগ্রিক পরিচয় দেয়, যেখানে অনেক সদস্য একসাথে থাকে। “সেনাবাহিনী” বললে আমরা বুঝি সেখানে অনেক সৈনিক আছে।
গুণবাচক বা ভাববাচক বিশেষ্য (Abstract Noun)
যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো গুণ, অবস্থা, কাজ বা ধারণার নাম বোঝানো হয়, যা ধরা বা ছোঁয়া যায় না, শুধু অনুভব করা যায়, তাকে গুণবাচক বা ভাববাচক বিশেষ্য বলে।
যেমন:
- গুণ: সততা, দয়া, সাহস, বুদ্ধি, তারুণ্য, মাধুর্য, সৌন্দর্য।
- অবস্থা: শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, বার্ধক্য, অসুস্থতা, সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না।
- কাজ: দয়া, ভক্তি, শ্রদ্ধা, ঘৃণা, শান্তি, স্বাধীনতা।
গুণবাচক বিশেষ্যগুলো আমাদের ভেতরের অনুভূতি এবং বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রকাশ করে। “সততা” একটি গুণ, যা আমরা অনুভব করি কিন্তু দেখতে পাই না।
ক্রিয়া বা অবস্থাবাচক বিশেষ্য (Verbal Noun)
যে বিশেষ্য পদ কোনো ক্রিয়ার নাম বা কাজ করাকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। এই ধরনের বিশেষ্য সাধারণত ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়।
যেমন:
- কাজ: দেখা, শোনা, বলা, লেখা, পড়া, ঘুমানো, দৌড়ানো, হাঁটা, ভোজন, দর্শন, গমন, শয়ন।
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যগুলো কোনো কাজের প্রক্রিয়া বা অবস্থাকে নির্দেশ করে। “পড়া” একটি কাজ, কিন্তু এটি যখন বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি একটি কাজের নাম বোঝায়। “লেখাপড়া” স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
বিশেষ্য চেনার সহজ উপায়
বিশেষ্য চেনাটা খুব কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি সহজ কৌশল অবলম্বন করলেই আপনি বিশেষ্য চিনতে পারবেন:
- বাক্যে “কে”, “কী”, “কোথায়” অথবা “কী রকম” দিয়ে প্রশ্ন করুন। উত্তরের শব্দটিই বিশেষ্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- যেমন: “ছেলেটি বই পড়ছে।” – কে পড়ছে? উত্তর: ছেলেটি (বিশেষ্য)। কী পড়ছে? উত্তর: বই (বিশেষ্য)।
- “ঢাকা একটি সুন্দর শহর।” – কোনটি সুন্দর শহর? উত্তর: ঢাকা (বিশেষ্য)। শহরটি কেমন? উত্তর: সুন্দর (এখানে সুন্দর একটি গুণবাচক বিশেষণ, তবে শহর জাতিবাচক বিশেষ্য)।
- লক্ষ্য করুন, কোনো শব্দ দিয়ে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান বা গুণের নাম বোঝাচ্ছে কিনা। যদি বোঝায়, তাহলে সেটি বিশেষ্য।
- বিশেষ্য পদ সাধারণত বাক্যের কর্তা (Subject) বা কর্ম (Object) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষ্য নিয়ে কিছু মজার তথ্য
- বিশেষ্য পদগুলো ভাষার ভিত্তি। বিশেষ্য ছাড়া বাক্য গঠন করা প্রায় অসম্ভব।
- ইংরেজি ভাষায় বিশেষ্যের ব্যবহার বাংলা থেকে কিছুটা ভিন্ন। যেমন, ইংরেজি ভাষায় Common Noun ও Collective Noun-এর ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়।
- কিছু বিশেষ্য পদ আছে, যেগুলো একইসাথে একাধিক প্রকারের মধ্যে পড়তে পারে। যেমন, “পানি” শব্দটি বস্তুবাচক বিশেষ্য, কিন্তু এটি যখন নদীর পানির কথা বলে, তখন তা স্থানবাচকও হতে পারে।
বিশেষ্য নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
এখানে বিশেষ্য নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো:
- প্রশ্ন: বিশেষ্য কত প্রকার ও কী কী?
- উত্তর: বিশেষ্য প্রধানত ছয় প্রকার: নামবাচক, জাতিবাচক, বস্তুবাচক, সমষ্টিবাচক, গুণবাচক এবং ক্রিয়াবাচক।
- প্রশ্ন: নামবাচক বিশেষ্য চেনার উপায় কী?
- উত্তর: নামবাচক বিশেষ্য সবসময় কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম বোঝায় এবং এর প্রথম অক্ষর বড় হাতের হয়।
- প্রশ্ন: গুণবাচক বিশেষ্য কী? উদাহরণ দিন।
- উত্তর: যে বিশেষ্য পদ দিয়ে কোনো গুণ, অবস্থা বা ধারণার নাম বোঝানো হয়, তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সততা, দয়া, তারুণ্য।
- প্রশ্ন: জাতিবাচক বিশেষ্য এবং সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের মধ্যে পার্থক্য কী?
- উত্তর: জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো শ্রেণির সব সদস্যকে বোঝায়, যেমন: মানুষ, পাখি। অন্যদিকে, সমষ্টিবাচক বিশেষ্য সেই শ্রেণির একটি দলকে বোঝায়, যেমন: দল, ঝাঁক, বহর।
- প্রশ্ন: ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য কীভাবে গঠিত হয়?
- উত্তর: ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য সাধারণত ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়। যেমন: দেখা থেকে দর্শন, বলা থেকে ভাষণ।
বিশেষ্যের ব্যবহারিক প্রয়োগ
ব্যাকরণে বিশেষ্যের গুরুত্ব অনেক। নিচে এর কয়েকটি ব্যবহারিক প্রয়োগ আলোচনা করা হলো:
- নামকরণ: বিশেষ্য ব্যবহার করে আমরা মানুষ, বস্তু, স্থান এবং অন্যান্য জিনিসকে নাম দেই, যা আমাদের যোগাযোগকে সহজ করে।
- শ্রেণীবিভাগ: বিশেষ্য ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন জিনিসকে আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোনটি কী।
- বর্ণনা: বিশেষ্য ব্যবহার করে আমরা কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারি, যা আমাদের মনের মধ্যে একটি স্পষ্ট চিত্র তৈরি করে।
- যোগাযোগ: বিশেষ্য আমাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে, কারণ এটি আমাদের সাধারণ ভাষা তৈরি করে।
প্রকারভেদ | উদাহরণ | বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|
নামবাচক বিশেষ্য | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঢাকা, পদ্মা | নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম বোঝায়। |
জাতিবাচক বিশেষ্য | মানুষ, নদী, পাখি | কোনো জাতি বা শ্রেণির সব সদস্যকে বোঝায়। |
বস্তুবাচক বিশেষ্য | সোনা, চাল, পানি | বস্তু বা পদার্থের নাম বোঝায়, যা গণনা করা যায় না। |
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য | দল, সমিতি, পঞ্চায়েত | কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টিকে বোঝায়। |
গুণবাচক বিশেষ্য | সততা, দয়া, তারুণ্য | কোনো গুণ, অবস্থা বা ধারণার নাম বোঝায়, যা ধরা বা ছোঁয়া যায় না। |
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য | দেখা, শোনা, লেখা | কোনো ক্রিয়ার নাম বা কাজ করাকে বোঝায়। |
উপসংহার
আশা করি, বিশেষ্য নিয়ে আপনার মনে আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। বিশেষ্য শুধু ব্যাকরণের একটি অংশ নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ্যের সঠিক ব্যবহার আমাদের ভাষাকে আরও সুন্দর ও স্পষ্ট করে তোলে। তাই, বিশেষ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখাটা খুব জরুরি।
যদি এই ব্লগ পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর বিশেষ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে, কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমি অবশ্যই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। হ্যাপি লার্নিং!